বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে দাবি মানা না হলে শনিবার (৫ জুলাই) থেকে পরিবহন ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছেন পাথর সংশ্লিস্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে সিলেটের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।
আন্দোলনকারীদের ৫ দফা দাবিগুলো হচ্ছে- বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়া, ক্রাশার মেশিন ধ্বংসের অভিযান বন্ধ করা, পাথর পরিবহনকারী ট্রাক আটক না করা, চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং সিলেটের জেলা প্রশাসকের অপসারণ।
বুধবারের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ কর্্আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, শ্রমিক-মালিকদের দাবিগুলো একেবারেই ন্যায্য ও যৌক্তিক। সরকার যদি দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সিলেটের অর্থনীতি থমকে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা পরিবেশের পক্ষে। একইসঙ্গে ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদেরও ক্ষতি চাই না। তাই পরিবেশসম্মতভাবে পাথর উত্তোলন শুরুর অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং “জিরো টলারেন্স” নীতির নামে চালানো অভিযান শ্রমিক ও মালিকদের বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা বলেন, এসব অনিয়ম বন্ধ না হলে পরিবহন ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্যও ডাকা হতে পারে—এর দায় সরকারকে নিতে হবে।
বিক্ষোভে পাথরসংশ্লিস্ট মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান।
উল্লেখ্য, ১৪ জুন প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলং পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এ সময় পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা তাদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন।
পরিদর্শন শেষে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংসহ সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি ভবিষ্যতে ইজারা দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দ্রুততার সঙ্গে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে থাকা পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। দুই উপদেষ্টার নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই ১৬ জুন থেকে পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। এই অভিযান সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কোনো না কোনো স্থানে নিয়মিত চলছে।
সবশেষ ৩০ জুন কোম্পানীগঞ্জে অভিযানে ১৭টি ক্রাশার মেশিন ধ্বংস, ১০টির বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং ১ লক্ষ ৪০ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। এরআগে ২৯, ২৫ ও ১৮ জুন জাফলংয়ে ১৬২টি যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। এইকদিনে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩০০ ক্রাশার মেশিন বন্ধ করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশনা দেয় সরকার। এর পর থেকে রাতের আঁধারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন চলত। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজারো শ্রমিক পাথর উত্তোলন শুরু করেন। এসব পাথর বিক্রি করা হয় পাথর ভাঙার যন্ত্রের মালিকদের কাছে। পরে সেসব পাথর মেশিনে ভেঙে ছোট করে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়।
মন্তব্য করুন