
নিচে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন, চলছে ভাঙচুর। চারদিকে দাঁড়িয়ে বিক্ষুব্ধ কিছু জনতা, দিচ্ছেন স্লোগান। সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ। আর এতে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত প্রাণ ভয়ে একদল সাংবাদিক আশ্রয় নেন ছাদে। দৃশ্যটি বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে ডেইলি স্টার ভবনের।
এদিন রাতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরের পর রাজধানীর কাওরান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো ও পরে ডেইলি স্টার পত্রিকার ভবনে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর—এমন কি লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। এদিকে আজ শুক্রবার সকালে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া স্তুপ। কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চারদিক ঘিরে রেখেছেন। ভিড় রয়েছে উৎসুক জনতারও।
দ্য ডেইলি স্টারের ভবনের সামনেও প্রায় একই দৃশ্য দেখা গেছে। গতকাল রাতের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির বর্ণনা দেন পত্রিকাটির স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল্লাহ মো. আব্বাস ।
তিনি মানবজমিনকে বলেন, ‘চিফ রিপোর্টার, চিফ নিউজ এডিটর এবং অন্যান্য স্টাফসহ ৩০ জন আটকা পড়েন সে সময়। ভবনের পেছন দিক দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। কারণ অফিসের সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা স্লোগান দিচ্ছিলো।’
তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসকে আসতে দেয়া হয়নি। তাদের আটকে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। আমি ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করেছিলাম। তারপর অনেক পরে আসছে তারা। আমাদের এখানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। তারপর আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।’
আব্বাস বলেন, ‘যখন আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ধোঁয়া বের হচ্ছিলো, তখন সবাই ছাদে চলে যাই। ঠিক রাত ১টা। পরে ৪টার দিকে আমাদের সবাইকে উদ্ধার করা হয়।’
রাতের বর্ণনা দিয়ে পত্রিকাটির আরেক কর্মী বলেন, ‘উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় আমাদের রাত কাটাতে হয়েছে। ছাদ থেকে নামতেও ভয় পাচ্ছিলাম। তারা নিচে ঘিরে রেখেছিল। এছাড়া ধোঁয়ার কারণে নামা যাচ্ছিল না।’
ডেইলি স্টারের চিফ রিপোর্টার (সেন্ট্রাল) পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য ফেসবুকে আজ ভোর ৫টায় এক পোস্টে লেখেন, ‘এমন দিন আমার জীবনে আর না আসুক। আমি মৃত্যু দেখে এসেছি। সবার জন্য শুভকামনা।’
পত্রিকাটির সিনিয়র রিপোর্টার জাইমা ইসলাম আরেক স্ট্যাটাসে গতরাতের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার কথা জানিয়ে পোস্ট দেন। লেখেন, ‘আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না। অনেক ধোঁয়া। আমি ভেতরে। তোমরা আমাকে মেরে ফেলছো।’
প্রথম আলোর এক কর্মী মানবজমিনকে জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল নিয়ে পত্রিকাটির ভবনে হামলা চালায়। এরপর ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ভবনে আগুন দেয়া হয়। সেখানে ক্যান্টিন, বন্ধুসভা, অ্যাকাউন্ট বিভাগ, চরকি ও প্রথমা প্রকাশনীসহ আরও কিছু বিভাগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সারারাত ঘুমাতে পারিনি। আতঙ্কে ছিলাম।’
এদিকে একদল বিক্ষোভকারী রাতে ডেইলি স্টারে ভাঙচুর ও আগুন দিলে সেখানে যান সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীর। হামলাকারীদের থামাতে গিয়ে তাদের তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে। একদল লোক তাকে ঘিরে হেনস্তার চেষ্টা চালায়। কয়েকজনকে তার গায়ে হাত দিতেও দেখা যায়। পরে তিনি ডেইলি স্টার ভবনে প্রবেশ করেন। সে সময় সেখানে গিয়েছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমও।
উল্লেখ্য, হামলার ঘটনায় আজ শুক্রবার প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা প্রকাশ হয়নি। বন্ধ রয়েছে অনলাইন সংস্করণও।